আসসালামু আলাইকুম, বর্তমান যুগটাকে বলা চলে অমানবিকতার ও আস্থাহীনতার যুগ। আমরা এমন এক সময়ে উপনীত হয়েছি যখন কেউ কারো বিপদে, কারো অসহায় অবস্থায় সাহায্য করতে এগিয়ে আসছিনা। বিধর্মীতো নয়ই আমরা মুসলিমরাও বিপদগ্রস্ত কোন লোককে সহযে সাহায্য করতে রাজি না। কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া, সেবা করা। কেউ আর্থিক শংকটে পড়েছে তাকে আর্থিক সহযোগিতা করা তো এখন কল্পনাও করা যায় না। কাউকে কর্জে হাসানা দিয়ে তার প্রয়োজনে পাশে থাকার মানুষ দশ গ্রামে একজনও পাওয়া দুষ্কর।
সেই আমরাই আবার ড.ইউনুস কে সুদ প্রসার ও প্রচারের জন্য মাঝে মাঝে আলোচনায় ধূয়ে দিচ্ছি। কিন্তু ৫০০/১০০০ টাকা দিয়ে কাউকে সহযোগীতা করে সুদ থেকে বিরত রাখার বেলায় আমি কিপটে হয়ে যাচ্ছি। এখানে আমার লাভ খোঁজ করছি, ১০০০ টাকা ধারের জন্য আসলে আমার স্বার্থ খোঁজ করছি। আর সুযোগ বুঝে চড়া সুদ জুরে দিচ্ছি।
আপনি দশ গ্রামে ঘুরে কর্জে হাসানা দেন এমন কোন দল,গুষ্ঠি কিংবা লোক পেতে খুব কষ্ট হবে। কিন্তু সুদে টাকা লাগায় এমন লোক দেখবেন আপনার ঘরে বা আপনার পাশের ঘরেই আছে। অনেক সময় ভাই বোনকে টাকা দেননা চড়া সুদ না দিলে।
আবার আমরা প্রায়শই দেখতে পাই বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের ওমুক তমুক নেতারা এবং আমাদের ইমাম সমাজ হাদিস কোরআনের রেফারেন্স দিয়ে সুদের হারাম হওয়ার বয়ান ঝাড়েন। ব্যাংক ও সমিতি থেকে দূরে থাকার দাবী জানান।
কিন্তু আপনি কি কোনদিন দেখেছেন তারা সুদ থেকে বিরত রাখতে কোন অসহায় মানুষকে বিনা সুদে সহযোগীতা করতে?একা না পাড়ুক গুটিকয়েক লোক মিলে কর্জে হাসানার মত কোন প্রজেক্ট চালো করতে? কখনো কি দেখেছেন ধনী ব্যক্তিদের কে সুদ বিহীন ঋণের জন্য তাগাদা দিতে? দেখেন নাই।
তাহলে এসব বক্তব্য দিয়ে,সেমিনার সিম্পোজিয়াম করে কি আমরা সুদকে সমাজ থেকে বিদায় করতে পারব? আর আল্লাহ কি আমাদের ছেড়ে দেবেন? না কখনোই না।
এমন আস্থাহীনতার মাঝে আমাদের অনেকের পরিচিত প্রিয় মুখ গার্ডিয়ান পাবলিকেশন এর কর্ণধার নূর মোহাম্মদ আবু তাহের ভাই। তার যায়গা থেকে কর্জে হাসানা প্রজেক্ট নামে একটা আইডিয়া সারা দেশবাসীর নিকট শেয়ার করেছে। এবং তিনি স্বয়ং নিজে সেই প্রজেক্ট চালো করে দিয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। এখন তার আহবানে দেশের অনেক জেলায়, থানায় গ্রামে এই প্রজেক্টের কাজ শুরু হয়ে যাচ্ছে।
আমার আজকের আলোচনা তার আইডিয়া বা প্রচেষ্টা নিয়ে না। আমি আজকে আপনাদের নিকট শেয়ার করব আরেকটি কর্জে হাসানার উত্তম উপায়।যেটা আমরা আমাদের সমাজে কিছুটা প্রচলন দেখতে পাই সেটা হচ্ছে "টান সমিতি"।
এটা একেক অঞ্চলে একেক নামে পরিচিত। আমাদের দেশের প্রায় কোম্পানিতে এবং গ্রামে গঞ্জে প্রচলিত "টান সমিতি" আমার কাছে মনে হয় কর্জে হাসানার উত্তম সমাধান ও মাধ্যম হয়ে চলমান আছেন।
টান সমিতির নিয়মটা হচ্ছে এমন প্রতি মাসে নির্দিষ্ট কিছু লোক মিলে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা একত্রে করে এদের মধ্যে একজন কে নির্বাচিত করে তাকে পুরো টাকাটা দিয়ে দেন। সম পরিমাণ টাকা প্রতিমাসে তোলা হয়। এবং যাকে গত মাসে দেয়া হয় তাকে আর নতুন করে টাকা দেয়া হয় না। যারা বিগত মাস গুলোতে টাকা পেয়ে যায় পুরো টাকা শোধ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতি মাসে তারা সুদ বিহীন টাকা জমা দিয়ে থাকে। আর সেই টাকা থেকেই নতুন আরেক জনকে টাকা দেয়া হয়।
বিষয়টা আরো ক্লিয়ার করি, ধরেন ১২ জন সদস্য প্রত্যেকে ১ হাজার করে টাকা দিলো এ মাসে। মোট কত হল? ১২ হাজার, এখন এই টাকা ১২ জনের যে কোন একজনকে দিয়ে দেয়া হবে। যে পরবর্তী মাস গুলোতে ১ হাজার করে টাকাটা রিটার্ন করবে। এমন করে পরের মাসে আবার ১২ জনে ১২ হাজার জমা করবে কিন্তু প্রথমজন ব্যতীত ১১ জনের মধ্যে একজনকে টাকাটা দেওয়া হবে।এই পদ্ধতিতে টাকা দেয়া-নেয়ার ফলে একদিকে টাকা ফেরতের ভয় থাকছেনা। আবার সুদ বিহীন প্রতিমাসে ১০০০ করে জমার কারণে টাকা গ্রহীতার কষ্টও হচ্চে না। এবং এর ফলে পারষ্পরিক আন্তরিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সব চেয়ে বড় কথা এর মাধ্যে কর্জে হাসানার মত মহৎ সুন্নতের আমলও হচ্ছে।আলহামদুলিল্লাহ।
আমার মতে এই টান সমিতি প্রতিটি গ্রাম- মহল্লায়, বাজার-বন্দর ও কর্ম ক্ষেত্রে ব্যাপক ভাবে প্রসার করা উচিৎ।
কষ্ট করে সময় নষ্ট করে আমার ভুলে ভরা মানহীন লেখা পড়ার জন্য সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।