রিউমার স্ক্যানার: সত্যের সন্ধানে এক সাহসী অভিযাত্রা
২০২০ সালের মার্চ মাসে, যখন গোটা বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারিতে নাজেহাল, তখন বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছিল বিপুল পরিমাণ গুজব, বিভ্রান্তিকর
🔍যেখানে সত্যের আলো খুঁজে নেয় অন্ধকারে
২০২০ সালের মার্চ মাসে, যখন গোটা বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারিতে নাজেহাল, তখন বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছিল বিপুল পরিমাণ গুজব, বিভ্রান্তিকর তথ্য ও ভুল প্রচারণা। এমন সময়েই যাত্রা শুরু করে Rumor Scanner Bangladesh — একটি তথ্য যাচাইভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম, যার মূল লক্ষ্য ছিল "ডিজিটাল নিরাপত্তায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং গুজব-ভিত্তিক বিভ্রান্তি মোকাবিলা করা।"
👨💼প্রতিষ্ঠাতা ও টিম: আদর্শ থেকে নেতৃত্বে
এই উদ্যোগের নেপথ্যে রয়েছেন তরুণ প্রযুক্তিবিদ ও সাংবাদিক সুমন আহমেদ। তিনি রিউমার স্ক্যানারের প্রতিষ্ঠাতা ও ফাউন্ডিং এডিটর। প্রযুক্তি, গণমাধ্যম ও সাইবার ফরেনসিক বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা এই প্রতিষ্ঠানকে শুরু থেকেই শক্ত ভিত দিয়েছে।
তার সঙ্গে আছেন:
মোঃ সাকিউজ্জামান, কো-ফাউন্ডার ও COO, যিনি কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি কৌশলগত বিষয়েও নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
জাওয়াদ বিন হাফিজ, টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ও সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, যিনি ফেসবুকের Hall of Fame–এ স্থান পেয়েছেন।
এছাড়া পুরো টিমে রয়েছেন প্রযুক্তি ও গবেষণায় পারদর্শী একদল তরুণ যারা সত্যকে তুলে ধরতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
রিউমার স্ক্যানার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তাদের ওয়েব সাইটের এক পোষ্টে লিখেন:
চীনের উহান শহরে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর গোটা চীন এবং পরবর্তীতে অন্যান্য দেশেও ছড়াতে শুরু করে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। পরের বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশেও প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়৷ সপ্তাহ ঘুরতেই আসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা। আক্রান্তের কিংবা মৃত্যুর আতঙ্কের পাশাপাশি সে সময়ে গুজবের প্রচারও ছিল লক্ষ্যণীয়, যা জনমনে বিভ্রান্তির জন্ম দিচ্ছিল। এমনই এক নাজুক সময়ে যাত্রা শুরু রিউমর স্ক্যানারের। একটি স্বাধীন সাংবাদিকতার উদ্যোগ হিসেবে ১৭ মার্চ যখন রিউমর স্ক্যানারের পথচলা শুরু হয় তখনই এর প্রধান লক্ষ্য ঠিক করা হয়, দেশের চলমান গুজব ও ভুয়া খবর নির্মূল করা এবং সঠিক তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই যাত্রায় শুরুর চ্যালেন্জটাই ছিল করোনা নিয়ে গুজব। করোনা আক্রান্তের ভুয়া খবর, করোনায় মৃত্যুর গুজব এমনকি করোনা মুক্তির নানা ভুয়া টোটকা নিয়ে গুজব ছিল সে সময়ের নিত্যদিনের ঘটনা। রিউমর স্ক্যানার এসব গুজব মোকাবিলায় নিরলসভাবে কাজ করেছে, নেটিজেনদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে সঠিক তথ্য। এই চেষ্টার অংশ হিসেবে আমরা ওয়েবসাইটে ফ্যাক্টচেক প্রকাশেই সীমাবদ্ধ থাকিনি। আমরা চেয়েছি, কম সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ যাতে সংশ্লিষ্ট গুজবের বিষয়ে ওয়াকিবহাল হয়।
⚙️কীভাবে কাজ করে রিউমার স্ক্যানার?
রিউমার স্ক্যানার মূলত সামাজিক মাধ্যম ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়া বিভ্রান্তিকর তথ্য স্ক্যান করে তা যাচাই করে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করে। তারা বিশেষভাবে ব্যবহার করে:
OSINT (Open Source Intelligence) পদ্ধতি
ডিজিটাল ফ্যাক্ট-চেকিং টুলস
নিজস্ব অ্যালগরিদম ও টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস
তাদের ওয়েবসাইটে গুজব নিরসনের তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, যার অনেকগুলোই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন।
📱প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও অ্যাপ্লিকেশন
Rumor Scanner-এর একটি নিজস্ব অ্যাপ রয়েছে যা প্লে স্টোরে পাওয়া যায়। অ্যাপটি ব্যবহার করে ইউজাররা সরাসরি গুজব যাচাইয়ের অনুরোধ পাঠাতে পারেন এবং সর্বশেষ ফ্যাক্ট-চেক রিপোর্ট দেখতে পারেন।
📊বর্তমান সাফল্য ও কার্যক্রম
🔹Fact Report ও গুজব বিশ্লেষণ
২০২৩ সালে তারা চিহ্নিত করেছে ১৯১৫টি গুজব, যার ৩১% ছিল রাজনৈতিক, ২৫% স্বাস্থ্যবিষয়ক এবং বাকিগুলো শিক্ষা, ধর্ম ও সামাজিক ইস্যুতে কেন্দ্রিত।
🔹INVESTIGATION UNIT চালু
২০২৪ সালে চালু হয় Rumor Scanner Investigation Unit, যারা বিভিন্ন বড় ইস্যুতে অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ভারতের মিথ্যা ভিডিও ও গুজব বিষয়ে তাদের প্রতিবেদন দেশ-বিদেশে আলোচিত হয়েছে।
🔹ইলেকশন পর্যবেক্ষণ ও গুজব র্যাডার
নির্বাচনকালীন সময়ে তারা চালু করে গুজব র্যাডার, যার মাধ্যমে নির্বাচনী সময়ে ছড়ানো গুজব ও বিভ্রান্তি চিহ্নিত করা হয়।
📚তাদের সচেতনতামূলক কাজ
Rumor Scanner শুধু রিপোর্ট করে না, তারা সাধারণ মানুষের মাঝে মিডিয়া লিটারেসি, ডিজিটাল হাইজিন, এবং সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেয় স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় ও সামাজিক মাধ্যমে। মিম, ভিডিও, পোস্টার, ওয়ার্কশপ— সব মাধ্যমেই তারা সক্রিয়।
🏆পুরস্কার ও স্বীকৃতি
আন্তর্জাতিক IFCN (International Fact-Checking Network)-এর সদস্য
Facebook Third-Party Fact-Checking Program অংশগ্রহণকারী
প্রাপ্ত Positive Influencer Award ২০২৩, তরুণ প্রজন্মকে তথ্য-সচেতন করতে ভূমিকা রাখার জন্য
🌍ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও লক্ষ্য
Rumor Scanner ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আরও বড় পরিসরে মিডিয়া শিক্ষাকে বিস্তৃত করতে চায়। তারা দেশে গুজব পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (Rumor Observatory) স্থাপন,AI-ভিত্তিক ফ্যাক্ট ডিটেকশন সিস্টেম, এবং কমিউনিটি ফ্যাক্ট-চেকার ট্রেইনিং প্রোগ্রাম চালুর পরিকল্পনা করছে।
আজকের ডিজিটাল যুগে, যেখানে তথ্যের নামে প্রচার হয় অসত্য— সেখানে রিউমার স্ক্যানার যেন এক বাতিঘর। তারা কেবল গুজব খণ্ডন করছে না, তারা সত্যের প্রচার করছে; তারা কেবল প্রতিরোধ করছে না, তারা মানুষকে সচেতন করে তুলছে।
রিউমার স্ক্যানার হল সেই সাহসী কণ্ঠস্বর, যারা তথ্যের ভিড়ে সত্যের ব্যাখ্যা দেয়।
🔗 বিস্তারিত জানুন: https://rumorscanner.com
রিউমার স্ক্যানার সম্পর্কে সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
রিউমার স্ক্যানার কী?
রিউমার স্ক্যানার একটি তথ্য যাচাই প্ল্যাটফর্ম যা বাংলাদেশের ভুয়া খবর ও গুজব শনাক্ত করে সত্য তুলে ধরে।
এটি কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
রিউমার স্ক্যানার প্রতিষ্ঠিত হয় ২০২০ সালে, কোভিড-১৯ মহামারীর সময়।
কারা এটি পরিচালনা করেন?
প্রতিষ্ঠাতা সুমন আহমেদসহ একটি দক্ষ টেক ও গবেষণা টিম এই প্ল্যাটফর্মটি পরিচালনা করেন।
রিউমার স্ক্যানার কীভাবে তথ্য যাচাই করে?
তারা OSINT, এআই টুল এবং বিভিন্ন উৎস বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্য যাচাই করে।