বাংলাদেশ ১৮ কোটি জনপদের একটি দেশ। আই এলও'র তথ্যমতে বাংলাদেশের বেকার জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটির উপরে। আইএলও আরো বলেন এই সংখ্যা আগামী কয়েক বছরে দ্বিগুণ হয়ে ৬ কোটিতে পৌঁছাবে। যা দেশের জনসংখ্যার ৩৯ দশমিক ৪০ শতাংশ হবে।
যাইহোক আজকের আলাপ বেকার জনসংখ্যা নিয়ে না। আলাপটা হচ্ছে। দক্ষ জনবল নিয়ে। এতো বেকার এবং এতো উচ্চ শিক্ষিত জনবল থাকতে বাংলাদেশের বিশেষ করে প্রাইভেট সেক্টরে চাকরি দাতারা দক্ষ জনশক্তি পাচ্ছে না কেন?
এর অনেক গুলো কারণ থাকতে পারে। আমার নিজস্ব ভাবনায় কয়েকটা বিষয় বলছি।যেমন-
১.কর্মমুখী ও কারিগরি শিক্ষার অভাব।
২.শিক্ষা নয় সার্টিফিকেট অর্জনই লেখাপড়ার উদ্দেশ্য হওয়া।
৩.এ্যাকাডেমীক ডিগ্রি কিংবা সার্টিফিকেট কে যোগ্যতার মাপকাঠি ধরে নেওয়া।
৪.দক্ষতা উন্নয়ন নয় টাকা উপার্জন কে একমাত্র টার্গেট করে কাজ করা।
১.কর্মমুখী ও কারিগরি শিক্ষার অভাব-
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় কর্মমুখী শিক্ষাকে অবমূল্যায়ন অথবা অমূল্যায়ন করার কারণে কর্মমুখী শিক্ষায় সরকারি উদ্যোগ দেখা যায়না। হাতেগোনা কয়েকটা কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করে বছরের পর বছর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে চালো রাখা হয়েছে। অথবা নামে মাত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে ওখানেও সার্টিফিকেট ধান্দা চলছে।
২.লেখাপড়ার উদ্দেশ্য সার্টিফিকেট অর্জন -
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কারিকুলাম হোক অথবা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ইচ্ছা হোক দু'পক্ষেরই একমাত্র উদ্দেশ্য যেন সার্টিফিকেট নামক ভারি কাগজটা অর্জন করা। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের বলতে গেলে ৭০% এরই নিজের স্কিল উন্নয়নে মনোযোগ নেই। এর একটা কারণও অবশ্য আছে। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা ধারণা কাজ করে সেটা হচ্ছে "যোগ্যদের এদেশে দাম নেই "।
তাই অনেকে দক্ষতা অর্জনে সময় না দিয়ে লিংকিং এর মাধ্যমে প্রত্যাশিত অবস্থান অর্জনের চেষ্টা করে।
৩.সার্টিফিকেটকে যোগ্যতার মাপকাঠি মনে করা-
আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মনে করেণ সার্টিফিকেটই তার যোগ্যতা প্রমাণ করে। তাই দেখবেন আপনি যখন অনার্স কিংবা মাস্টার্স পাশ করে চাকরী খোঁজেন অথবা কোন চাকরী পানও আপনার আশেপাশের অনেক মানুষ এমন মন্তব্য করবে " মাস্টার্স পাশ করে এই জব করছ!" অথবা "এতো লেখাপড়া করে এই পোস্টে চাকরি করছ!" এমন মন্তব্য শুনে সহজেই অনুমেয় যে আমাদের শিক্ষার্থী ও অভিভাবক কিংবা সমাজের মানুষের ধারণা কি।
৪.দক্ষতা অর্জন নয় টাকা উপার্জন মূল লক্ষ্য -
শেষ পয়েন্টটি আমাদের দেশের চাকরি প্রার্থী এবং চাকরিজীবী উভয়ের উদ্দেশ্য। আমাদের মধ্যে সব সময়ই কিভাবে একটু বেশি টাকা উপার্জন করা যায়।কিভাবে কম কাজ করে কোন রকম সময় পার করে টাকা উপার্জন করা যায় সেই প্রচেষ্টা সব সময় করি। এর একটা প্রধান কারণ হলো কোন কাজটাকে বা কোন প্রফেশনকে জীবীকা উপার্জনের পথ হিসেবে গ্রহণ করবে তা ঠিক না করতে পারা। আরেকটা কারণ হচ্ছে কাঙ্খিত জব না পাওয়া। অনেকে তার চাওয়া অনুযায়ী কাঙ্খিত জব না পেয়ে তার অপছন্দের কোন জবে জীবীকার তাগিদে যোগ দেন।
এছাড়াও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং কর্মকর্তাদের কিছু বিষয়ও আছে যেমন-
১.যোগ্যতার মূল্যায়ন না করা।
২.উপযুক্ত কর্ম পরিবেশ না থাকা।
৩.কাজ অনুযায়ী বেতন না দেয়া।
৪.বড় বড় পজিশনে প্রতিষ্ঠানের আত্মীয় অথবা নিজস্ব লোক নিয়োগ দেওয়া।
৫.প্রমোশনের ধীরগতি।
৬.পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না দেয়া।
৭.স্বজনপ্রীতী করা।
৮.তেলবাজ লোকদের মূল্যায়ন করা।
৯.সব শেষে হুটহাট ছাটাই করা।
এসব কারণে বাংলাদেশে দক্ষ লোকবল গড়ে উঠছে না বলে আমার ধারণা।
১০.০৫.২২ইং